ছোট গল্প - হারামে আরাম নাই - ইমরুল চৌধুরী |
ছোট
গল্প - হারামে আরাম নাই - ইমরুল চৌধুরী
[গল্পের শুরুতেই সতর্কতাঃ - উবাই
ইবনু কা‘ব (রাঃ)-বললেন, নবী (সাঃ)- এর যুগে আমি একটি থলে পেয়েছিলাম,
এর মধ্যে একশ’ দ্বীনার ছিল। আমি এটা
নাবী (সাঃ)-এর কাছে নিয়ে গেলাম। তিনি আদেশ করলেন, এক বছর
পর্যন্ত তুমি এটার ঘোষণা দিতে থাক। কাজেই আমি এক বছর পর্যন্ত এর ঘোষণা দিলাম। এরপর
আমি তাঁর কাছে এলাম। তিনি আরো এক বছর ঘোষণা দিতে বললেন। আমি আরো এক বছর ঘোষণা
দিলাম। এরপর আমি আবার তাঁর কাছে এলাম। তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবার
এক বছর ঘোষণা দিতে বললেন। আমি আরো এক বছর ঘোষণা দিলাম। এরপর আমি চতুর্থবার তাঁর
কাছে আসলাম। তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, থলের
ভিতরের দ্বীনারের সংখ্যা, বাঁধন এবং থলেটি চিনে রাখ। যদি
মালিক ফিরে আসে তাকে দিয়ে দাও। নতুবা তুমি নিজে তা ব্যবহার কর। (বুখারী শরিফ থেকে বিশাল হাদীসের অংশবিশেষ)
সুতরাং কুড়িয়ে
পাওয়া জিনিসে হাত না দেয়াই বুদ্ধিমানের কাজ]
কুড়ানো
টাকা নিয়ে কুরুক্ষেত্র!
পুরো
দশটা দিন দিশেহারা নারু কাণ্ডজ্ঞানহীন কাণ্ডকারখানা ঘটিয়ে বসে। জানা-মতো সকল চাতুরী খাটিয়ে চতুর নারু আমাকে ফতুর করে
দেয়। যুক্তিযুক্তহীন
যুক্তিতর্কে আমাকে ভড়কে দিতে চায় : দ্যাখ ইমু, মানিব্যাগটা কুড়িয়ে পাওয়ার সময় আমিও তোর সঙ্গে ছিলুম। পাওয়া টাকার পাওনা অংশ আমাকে দিতেই হবে।
বলে
স্থিরসংকল্প নারু পাওয়া টাকার আশায় পাওনাদার হবার ভান করে।
নারুর
কচকচানি আমি তৎক্ষণাৎ নাকচ করে দিই : টাকাটা তুই কুড়িয়ে পাসনি। ফাঁকা রাস্তা থাকলেই টাকা কুড়িয়ে পাওয়া যায় না। এর জন্যে বাঁকা চোখ থাকা চাই। টাকা পাওয়ার ব্যাপারে তোর কোনো অবদান আছে তা আমি স্বীকারই করি
না।।
আমি
হককথার মতো নারুকে সাফ সাফ জানিয়ে দিই। নারু তথাপি
নিজের হক ছাড়তে রাজি হয় না। বরং হক কথার
হকিকত শুনিয়ে আমার সাথে হঠকারী করতে চায় : ‘তুই তো রোজই খালিহাতে ফিরিস। আমি সঙ্গে ছিলুম বলেই তো মানিব্যাগটা তোর নজরে এলো। আমিই তো তোকে মানির মাণিক্য দেখালুম। বলে নারু চানক্যের মতো আমার দিকে তাকায়। বাক্যবাণে আমাকে বাঁকা করতে চায়। বাক্যের চাকচিক্যে বেকায়দা ফায়দা ওঠাতে চায়।
আমি
কায়দামতো নারুকে ‘নো’ করার চেষ্টা
করি :
তুই আমার সঙ্গে ছিলি ওটা নেহাত কোইন্সিডেন্ট। তুই আমার সঙ্গে না থাকলেও সেদিন কালিচরণ রোডে মানিব্যাগের মাণিক্য
ঠিকই চিকচিক করত। তুই ভেবেছিস
ওই চাকচিক্য ছেড়ে আমি খালিহাতে হাততালি দিয়ে বাড়ি ফিরতাম। আর তুই কি কম বিট্রেই না করতে চেয়েছিলি আমার সঙ্গে। ছোঁ মেরে মানিব্যাগটা ছিনিয়ে নিয়ে পুরো টাকাই তো আত্মসাৎ করতে
চেয়েছিলি। ঠিক সময়মতো
পা দিয়ে তর্জনী চেপে না রাখলে পুরো টাকার মালিক তো তুই হতিস।
বলে
আমি নারুর আসল উদ্দেশ্য ব্যক্ত করি। কিন্তু যেখানেই
মানির প্রশ্ন সেখানে কোনো ক্ষীণ আশাও নিরাশ হতে দেয় না নারু। প্রয়োজনবোধে মুনি হতেও দ্বিধাবোধ করে না। মানির প্রশ্নে রক্তাক্ত হানাহানি ঘটাতেও তৎপর হয়ে ওঠে নারু। ফাও টাকার ফিফটি পার্সেন্ট তোকে দিতেই হবে ইমু। রক্তচক্ষু নারু শক্তভাবে কথাগুলো উচ্চারণ করে। ফিফটি পার্সেন্ট আদায় করার জন্যে যেন শক্তভাবে গাঁট হয়ে দাঁড়ায়। ব্যাপারটা মিটমাট করে নিজের ভাগ নিয়ে নারু ভেগে পড়তে চায়।
নারুর
আচরণ আমাকে বিস্মিত করে। আমি যতই স্মিতমুখে
জবাব দিই নারু যেন ততই আমাকে ভীত করে তুলতে চায়। যতই নির্ভয় হবার ভান করি ততই নারু ভয় দেখিয়ে আমাকে রীতিমতো
পেরেশান করে তোলে। নারুর সকল চাতুরী
প্রয়োগ সত্ত্বেও ওর ব্ল্যাকমেইলের মুখে টিকে থাকার চেষ্টা করি। একে একে ওর সকল প্রচেষ্টাই ফেইল হতে থাকে।
‘তার মানে পুরো
টাকাটা তুই একাই আত্মসাৎ করবি।’ নারু যেন শেষ
কথা জানতে চায়। আমিও সর্বশেষ
কথা নারুকে জানিয়ে দিতে দেরি করিনে : ‘তোর এখনও কোনো সন্দেহ থাকা উচিত নয় না। প্রয়োজন হলে বেমালুম তাই করবো। পুরো টাকাটাই আমি দু’হাতে দেদারভাবে উড়িয়ে ফুর্তি করে বেড়াবো। এটা তোর অনেক আগেই মালুম হওয়া উচিত ছিলো।’ বলতে বলতে নারুকে আমার শেষ কথাটা প্রচণ্ডভাবে মালুম করাবার চেষ্টা
করি। নারুর মুখের সামনে বজ্রপাতের মতো দরজার
খিল এঁটে খিলখিল করে উঠি।
‘দূরূহ’ বলে দুরূহ
নারুকে দূর হয়ে যেতে বলি। আর নারু রাগে
দু’হাত রগড়াতে থাকে। খিলবন্ধ দরজায় প্রচণ্ড ঢিল মেরে সব লণ্ডভণ্ড করার জন্য যেন মারমুখো
হয়ে ওঠে। তারস্বরে তারবার্তার
মতো সংক্ষেপে খ্যাপা নারু তথাপি জানতে চায়, তা হলে এই তোর শেষ কথা ইমু। এ আমি দরজার খিল ধরে সেইরকম খিলখিলিয়ে উঠি : ‘আর কথার বাড়াবাড়ি
হওয়া উচিত নয় নারু। এখন তুই ভালোয়
ভালোয় কেটে পড়তে পারিস।’ বন্ধ দরজার
ওপাশে রাগান্বিত নারুকে যেন সনির্বন্ধ অনুরোধ জানাই আমি।
উপায়ান্তর
না দেখে যেন মন্ত্র উচ্চারণের মতো নারু বলে যায় : ‘আমি খেটে খাওয়া ছেলে ইমু। পাওয়া টাকায় আমার কোনো লোভ নেই। জেনে রাখিস কেবল কুঁড়ে লোকের জন্যেই কুড়ানো টাকা। তুই কুড়িয়ে পেয়েছিস, আমি খেটে ওই টাকা আনবো। এই টাকা তোর পেটে সইবে না ইমু বলে যাচ্ছি।’ বলতে বলতে নারু
যাবার ভান করে।
আমিই
আবার নারুকে থামাই। ‘কোনো বদহজম
হবে বলতে চাস? হ্যামবার্গার চিকেন রোস্ট-ফ্রাইডপ্রন
বদহজমের কিছু নেই নারু। নাহয় কয়েকটা
ফুটসল্ট লাগবে বড়জোর।’
বলে
আমি জোর শব্দ তুলে নারুকে ফলস ঢেকুর শোনাই।
নারু
শুনতে পায় কি না জানিনে। তবে আমি স্পষ্ট
শুনতে পাই নারুর জিভের চুকচুক শব্দ। রসনার রসে যেন
আস্ত রসমালাই অনুভব করে নারু। নারুর সবটাই
ফাও ফাও টাকা। ফাও খাওয়া। উল্টো নারুই আমাকে উপদেশ দেয় : ‘ফাও টাকার ভোগ তোর হবে না ইমু। বরং ভোগান্তিই হবে বলে যাচ্ছি।’ বলে নারু যাবার জন্যে আবারও পা বাড়ায়।
আমি
নারুকে আবারও থামাই : ‘তা হলে এও শুনে
যা নারু,
তুই সেদিন মাহবুব ক্লথ মার্কেটে ডবল নিটের যে জাপানি প্যান্ট পিসটা দেখেছিলি
আর সেদিন পারাডাইস মার্টে লংকলার রেডস্ট্রাইপ শার্টটা দেখার পর থেকে তোর যেরকম হার্টবিট
হচ্ছিল কাল থেকে আমাকে দেখামাত্রই তোর সেই হার্টবিট মানে....।’
বলে
আমি সম্পূর্ণ কথা সারার আগেই নারুকে ওর হার্টফেল করার চেষ্টা করি।
কিন্তু
নারু উল্টে নিজের বুক দাপড়ে দাপট দেখায় : ‘কাল থেকে কার হার্টকে বিট করবে তা তুই
নিজেই টের পাবিনে ইমু।’ বলতে বলতে
নারু একেবারেই অদৃশ্য হয়ে যায়। আমি যেন হাঁফ
ছেড়ে বাঁচি। পাওয়া টাকা
ছেড়ে ওর চলে যাওয়ায় খটকা লাগলেও আমি আপাতত নির্ভয়ে দরজা খুলে দিই। আপনমনে খোলা দরজার খোলা হাওয়া খাই।
আমি
কুড়ানো টাকার পুরোটা একাই ভোগ করতে গিয়ে ভোগান্তি বাড়িয়ে তুলি। নারুর কথাই ঠিক। যেন ক্ষণিকের
মধ্যেই অদৃশ্য নারুর অদৃশ্য হাতের কারসাজি দৃশ্যময় হয়ে ওঠে। পরের দিনই টের পাই। বন্ধ দরজায়
প্রচণ্ড শব্দে আমারই হার্টফেল হবার উপক্রম হয়। বন্ধ দরজা যেন খোলার অপেক্ষায় থাকে না। যেন আপনাতেই খুলে যায়। আর অপর প্রান্তের
ষণ্ডামার্কা লোকের পাণ্ডা দেখে কাঁপুনি ধরে যায় আমার। শর্টহ্যাণ্ডের মতো শর্টকাটে কাজ সেরে ফেলতে চায়—মানে, মানিব্যাগ নিয়ে মানে-মানে কেটে পড়তে চায়।
আমি
বিনা বজ্রপাতে আকাশ থেকে পড়ি। কার মানিব্যাগ! আমি
কিছুই না জানার ভান করি। তা হলে কি নারু
টাকা আদায় করার জন্যে গুণ্ডা লাগিয়েছে! ভেবে আমার গণ্ডদেশ থেকে যেন
ঘাম ঝরতে থাকে। হীন নারুর হীন
কার্যকলাপে আমার ঘেন্না ধরে যায়। এদিকে ষণ্ডা
লোকটা ষাঁড়ের মতো চেঁচিয়ে ওঠে। পাওয়া টাকা
নিয়ে হাওয়া হয়ে যেতে চায়। স্বীয় কথা
বিশ্বাস করাতে গিয়ে আমাকে দ্বিগুণ বিস্মিত করে তোলে : ‘আমি কি হাওয়া
থেকে কথা বলছি। এই দেখুন না আজকের খবরের কাগজেই তো রয়েছে।'-
বলে সে বগলদাবা খবরের কাগজ সবলহাতে আমার দিকে বাড়িয়ে দেয়।’ আমি একদিকে বড় হাত করে তার দিকে দু’হাত বাড়িয়ে দিই, অপর
দিকে আমার ভেতরটা আস্তে আস্তে জড় হয়ে যেতে থাকে। ত্বরিতে আমার হার্টবিট তড়াক করে বেড়ে যায়, যেন
তড়িতাহতের মতো আমি শুধু হাত বাড়িয়েই থাকি নির্জীবের মতো। আড়ষ্ট জিভে আমি স্পষ্ট করে বলতে পারিনে কিছুই।
কেবল
বুঝতে পারি নারুরই দেয়া মরণপণ বিজ্ঞাপন এবং তাও নিজের নামে নয় অপরের নামে। নারু পরকে দিয়ে অপরের ধন আর পরকেই দিতে চায়। বিজ্ঞাপন দেখে আমিও পণ করি। পাই পাই করে পাওনাদারদের পইপই জবাব দিই। কথার খই ছুটাই। মানে-মানে
সকলকে মানিয়ে অপরের মানিব্যাগ নিজের জেবে আগলে রাখি। পাওয়া টাকার পাওনা লোকদের ধাওয়া করে ফিরি। ধাওয়া করি আর দায় সারি। তাড়া করা লোকদের তাড়া খেয়েও তোড়া নোট হাতছাড়া করিনে।।
একসময়
নারুও তাড়া করে : ‘তার মানে তুই অন্যায়ভাবে টাকাটা ভোগ করবি। মানিব্যাগটা মেরে দিয়ে একটা গর্হিত কাজ করবি।’ বলতে বলতে নারু যেন আমাকে হিতোপদেশ দেয়। হিতে বিপরীতের মতো আমি হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। নারুর অপকর্মের একটা বিহিত করতে চাই : ‘তাই বলে তুই যার-তার
নামে যা-তা একটা বিজ্ঞাপন দিবি! অবিবেকজনিত
অবিজ্ঞ কাজ করবি!’ নারু তথাপি বিজ্ঞলোকের মতো ভান করে : বিজ্ঞাপনটা নিশ্চয়ই বিফলে
যায়নি। যার টাকা সে
নিশ্চয়ই সন্ধান পেয়েছে।’
বলে
আমাকে কিঞ্চিৎ সন্দিগ্ধ করে তুলতে চায়। একটা পুলিশি
কাণ্ডকারখানা না ঘটিয়ে নাকি আমি নিস্তার পাবো না---এই বলে নারু আমাকে সতর্ক
করে। সবিস্তারে আমাকে
ক্রিমিন্যাল অ্যাক্ট সম্পর্কে অবহিত করে নারু। আমাকে ভয় দেখায় এবং ভাবিয়ে তোলে।
তথাপি
টাকার মায়াডোর আমাকে বিভোর করে রাখে। আমি সহজেই কুড়ানো
মানিব্যাগের মায়া ছাড়তে পরিনে। মানির
(টাকা) মাণিক্য আমি কাঁকড়ার মতো আঁকড়ে থাকতে চাই। নারু আমার ভাবসাব দেখে প্রীত হয় না। বরং হৃত (হারানো) টাকা পুনরুদ্ধারের চেষ্টায় আমাকে আরও ভীত করে
তুলতে চায় : ‘টাকার আসল মালিক কে
তা তুই নিজেও জানিসনে ইমু। আসল মালিক তোর
কাছ থেকে টাকা আদায় করে নেবেই। পাওয়া টাকা
ভোগ করার আশা তুই এখনও ছেড়ে দে। নিজের সর্বনাশ
তুই নিজেই ডেকে আনছিস ইমু।’
বলে
নারু আমার সর্বনাশা পরিণতির ইঙ্গিত দেয়। আসল মালিককে
টাকা না দেয়া পর্যন্ত খবরের কাগজে নাকি বিজ্ঞাপন বেরুতেই থাকবে। এই বলে নারু আমাকে সচেতন করতে চায়। আমার নাকি চেতনা ফেরা দরকার বলে নারু আমার চেতনায় আঘাত করতে নারুর সদুপদেশ যেন আমার বিবেকে ঝড় তুলে দেয়। আমি সৎকাজে নিজেকে মনোনিবেশ করি এবং নারুকে শেষ কথা জানিয়ে দিই : ‘দ্যাখ নারু, পাওয়া
টাকা দিয়ে বরং নেকি কাজ করা ভালো। পুরো টাকাটাই
তার চেয়ে গেণ্ডারিয়া মসজিদে দান করবো।’ নারু আমার
কথা শুনে ন্যাকা সাজার চেষ্টা করে। উৎগ্রীব হয়ে
উৎসাহ দেয় : ‘তাই ভালো ইমু। সকলের নেক নজরে
থাকার চেষ্টা কর। অপরের টাকার
ওপর যে লোভ দেখিয়েছিস তাতে তোর কৃত পাপের কোনো ক্ষোভ থাকবে না। তোর বরং প্রায়শ্চিত্য করা দরকার।’
মেকি
না আমাকে উপদেশ দেয়। নেক কাজে দেরি
করা উচিত নয় বলে না আমার নেক নজর থেকে উধাও হয়ে যায়। আমি সহজেই নারুর মেকআপ বুঝতে পারিনে।
তথাপি
মেকি সিদ্ধান্তে অটল থাকি আমি। পাওয়া টাকা
ও মেকি নারু—এ দুয়ের প্রাণান্তকর
অবস্থা থেকে আমি আশু মুক্তি চাই। মুক্তি চাই
গেনডারিয়ার জামে মসজিদের মুয়াজ্জিন সাহেবের কাছে যার সফেদ শুশ্রু গুস্কময় অলৌকিক
মুখাবয়বের দিকে তাকিয়ে তুলে দিই ওয়াসা রোডে কুড়িয়ে পাওয়া কালো মানিব্যাগ। কপর্দকহীন শূন্যহাতে ঘরে ফিরে আসি। কিন্তু সেই অলীক উদ্ভাসিত চেহারা
যেন ক্ষণিকের মধ্যেই মিলিয়ে যায়। মেকি নারু ওর
মেকআপ নিয়ে স্মিতমুখে খিলখিল করে ওঠে : ভালোই হলো ইমু।
আমি
অর্থহীন সন্দিগ্ধ নারুর দিকে তাকাই : ‘তা হলে কি...।’
পুরো
মানিব্যাগটা কেড়ে নেয়ার মতো নারু আমার মুখের কথাও কেড়ে নেয় : আসল
মালিককেই শেষ পর্যন্ত টাকাটা দিলি তবে.... আমিও নারুর কথার গ্রাস
কেড়ে নেয়ার চেষ্টা করি। বিশ্বাস করি
না নারুর কথায়;
‘তবে কি মুয়াজ্জিন
সাহেবই...।’ নারু যেন থাম থাম বলে চিৎকার করে ওঠে। পকেট থেকে কালিচরণ রোডের কুড়ানো কালো মানিব্যাগ বের করে রীতিমতো
আমার ঘাম ছুটিয়ে দেয় : তুই আমাকে মুয়াজ্জিন সাহেব বললেও আমার আপত্তি
নেই। প্রয়োজন হলে
আমিও মসজিদে আজান দেই আবার ইমামতিও করতে পারি। হাঃ হাঃ ইমু, তুই যেন কি বলছিলি। হ্যামবার্গার, ফ্রাইড প্রণ, রেডস্ট্রাইপ লংকলার শার্ট- নারুর কথাগুলো
আমার হার্টের ভেতর সূক্ষ্ম পিনের মতো চিনচিন করে বাজতে থাকে।’
No comments:
Post a Comment