অনুবাদ গল্প- বসন্তের খাদ্য তালিকা – ও হেনরী (SPRINGTIME Á LA CARTE – O. Henry) |
অনুবাদ গল্প- বসন্তের খাদ্য তালিকা – ও হেনরী (SPRINGTIME Á LA CARTE – O. Henry)
ফুল
ফুটুক না ফুটুক,
আজ বসন্ত। শীত
যাই যাই করছে,
বসন্ত কিন্তু তার
সাড়া পাঠিয়ে দিয়েছে
আমাদের তরুণী নায়িকা
সারাহর হৃদয়ে। নির্জন
ঘরে টেবিলে মাথা
রেখে আঝোরে কেঁদে
চলেছে সারাহ।
কেন
কঁদছে সে?
সেকথা জানার আগে
আসুন আমার সারাহকেই
একটু জেনে নিই।
মেয়েটি
নিউইয়র্ক শহরে ফ্রিল্যান্সার
স্টেনোগ্রাফার হিসেবে কাজ
করে। আসলে বাঁধাধরা
কোনও মোটা মাইনের
কাজ করার মত
শিক্ষাগত যোগ্যতা বেচারীর
নেই।
লাল
ইটের যে পুরোনো
বাড়ীটায় সে থাকতো,
তার পাশেই ছিল
হোম রেষ্টুরেন্ট। একদিন
সেখানে নৈশভোজ করার
সময় সারাহর হাতে
পড়লো সেদিনের খাদ্য
তালিকাটি। অসংখ্য ভুল
শব্দ ও বানানে
ভরা একটি আস্ত
প্রহেলিকা। কি মনে
করে সেটি বাড়ী
নিয়ে এসে নিজের
টাইপরাইটারে সেটি সুন্দর,
নির্ভুল ও পরিচ্ছন্ন
করে টাইপ করে
রেষ্টুরেন্ট-এর মালিককে
দেখিয়েছিল।
মালিক
তার সঙ্গে একটা
চুক্তি করে ফেললো,
রেষ্টুরেন্টের একুশটি টেবিলের
জন্য মূল্য সহ
খাদ্যতালিকার সমস্ত কপি
তাকে সরবরাহ করতে
হবে। প্রতিদিনের ডিনারের
জন্য একটি খাদ্যতালিকা
ও লাঞ্চ ও
ব্রেকফাস্টের তালিকায় নতুন
কোন সংযোজন বা
পরিবর্তন হলে সেটিও
তাকে টাইপ করে
দিতে হবে। পরিবর্তে
রোজ তাকে একজন
পরিচারক তিনটি পদের
ডিনার পৌছে দিয়ে
আসবে। আর তার
সঙ্গেই দেবে পরদিনের
ডিনারের খাদ্য তালিকার
একটি খসড়া।
তা
এ পর্যন্ত ভালই
ছিল। পুরো শীতকালটা
সারা ঘরের গরমে
আরাম করে ডিনার
খেয়েছে, শুধু খাওয়ার
জন্য এই শীতে
কষ্ট করে পথে
নামতে হয়নি। সুখেই
ছিল সারাহ।
আজ
বিকালে দেওয়ালের ক্যালেণ্ডারটা
যেন তাকে বারেবারেই
স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে,
বসন্ত জাগ্রত দ্বারে
সারাহ, তোমার সুন্দর
শরীর মনকে কি
অভিনন্দিত করবে না
এই ঋতুরাজ? তুমি
এখনও এত একা,
এত বিষন্ন কেন?
কারণটা
খুঁজতে একটু পিছনে
ফেরা যাক। গত
গ্রীষ্মে সারা গ্রামে
বেড়াতে গিয়েছিল, সেখানে
এক জোতদারের ছেলের
সঙ্গে তার পরিচয় হয়,
নাম তার ওয়াল্টার। সারাহর
উজ্জ্বল বাদামী চুলের
ওপর সেই সোনালী
হলুদ মুকুটের শোভায়
উচ্ছসিত হয়েছে ওয়াল্টার।
কথা ছিল বসন্তের
শুরুতেই বিয়ে হবে
তাদের।
কিন্তু
কোথায় ওয়াল্টার। বাড়ী
পাল্টানোর পর এখানে
এসে নতুন ঠিকানা
জানিয়ে চিঠি লিখেছে
সারাহ। না চিঠির
উত্তর, না মানুষটা।
দরজায় টোকা দিয়ে
রেষ্টুরেন্টের পরিচালক পরের
দিনের ডিনারের খাদ্যতালিকার
খসড়া দিয়ে গেল।
অশান্ত
মনটাকে গুছিয়ে নিয়ে
কাজে বসলো সারাহ।
কড়া নজর রেখে
নামের দৈর্ঘ্য অনুসারে
প্রতিটি খাদ্যবস্তুর নামকে
যথাস্থানে সাজিয়ে নিয়ে
দ্রুতবেগে টাইপ করতে
শুরু করলো। খাবারের তালিকায়ও
লেগেছে বসন্তের ছোঁওয়া।
ফল
মিষ্টির ঠিক ওপরে সব্জির
তালিকা, গাজর ও
মাটন, টোস্টের ওপর
শতমূলীর টুকরো, টমেটো,
যব ও সব্জির
ঝোল, সীম,
বাঁধাকপি, আর তারপরের
নামটা? সেদিকে তাকিয়ে
নিজেকে তার সংযত
রাখতে পারলো না
সারাহ। চোখের জলের
বন্যায় ভেসে গেল
সে। খাদ্য তালিকার
পরবর্তী কিস্তিটা ছিল
হলুদ ড্যাশেলিয়ন ফুল
আর ডিম দিয়ে
তৈরী একটা খাদ্যবস্তু।
ডিম চুলোয় যাক,
কিন্তু ড্যাণ্ডেলিয়নই তো সেই
ফুল যার মুকুট
তার মাথায় পরিয়ে
দিয়েছিল ওয়াল্টার।
ধীরে
ধীরে সারাহ তার
কান্না থামালো। টাইপটাতো শেষ
করতেই হবে। তার
মনটা পড়ে রইল
সেই বনছায়ায় যুবক
জোতদারের কাছে,
হাতের আঙ্গুলগুলো কঠোর
অনুশাসনে ঝর্ণাধারার মত
টাইপরাইটারের ওপর বয়ে
চললো।
ছটার
সময় ওয়েটার ডিনার
দিয়ে গেল আর
পরদিনের জন্য টাইপকরা
একশটি খাদ্যতালিকা নিয়ে
গেল।
খেতে
বসে সারাহ ড্যাণ্ডেলিয়ন
ফুলের তৈরী খাদ্যবস্তুটি
আগেই সরিয়ে রাখলো। ঐ
সুন্দর হলুদ রঙের
ফুলগুলো দিয়ে কি
রকম একটা কালো
থকথকে খাদ্যবস্তু তৈরী
করা হয়েছে। স্বাদ
যত ভালই হোক
না কেন,
প্রাণে ধরে ঐ
ফুল খেতে পারবে
না সারাহ। ঐ
ড্যাণ্ডেলিয়ন ফুলই হোল
বসন্তের অগ্রদূত ওর
মনেই মিশে আছে
সারাহর জীবনের মধুরতম
স্মৃতি। ওয়াল্টার তার
ভালোবাসার রানী হবু
বঁধুকে এই ফুলেরই
মুকুট পড়িয়ে দিয়েছিল।
সাতটা
তিরিশ মিনিটের সময়
পাশের ফ্ল্যাটে স্বামীস্ত্রীতে
লেগে গেল তুমুল
ঝগড়া। ওপরের ফ্ল্যাটের
লোকটি শুরু করলো
তার নিত্যদিনের বংশীবাদন।
ঘরের গ্যাস কিছুটা
কমানো হলো। বাড়ীর পেছনের
বেড়ার ওপর দিয়ে
বেড়ালগুলো ধীরে ধীরে
Mukden এর
দিকে চলে গেল।
কয়লার গাড়ি থেকে
মাল নামানো শুরু
হোলো।
সারাহ
বুঝতে পারলো এবার
তার বই পড়ার
সময় হয়েছে। ট্রাঙ্ক
থেকে “The Cloister and the Hearth”
বইখানা বের করে
চেয়ারে বসে আরাম
করে ট্রাঙ্কের ওপর
পা ছড়িয়ে দিয়ে
সারাহ বইটির নায়ক
জেরার্ড এর সঙ্গে
ঘুরে বেড়াতে লাগলো
পথে প্রান্তরে।
সামনের
দবজার ঘন্টাটা বেজে
উঠলো।
বাড়ীওয়ালাকে সাড়া দিতে
শুনেই সারাহ একলাফে
নিজের দরজায় কান
পাতলো।
ভালুকের পাল্লায় পড়ে
জেরার্ড আর ডেনিসের
যে কি দশা
হোল, কে
তার খোঁজ রাখে।
তারপরই নিচের হলঘরে
জোরালো বলিষ্ঠ গলার
আওয়াজ। খরগোশের মত
কান খাড়া হয়ে
গেল সারাহর। বইটা
মাটিতে ফেলেই ছুট
লাগালো দরজার বাইরে।
সারাহ
সিঁড়ির মাথায় পৌছাতে
না পৌছাতেই তার
তরুণ জোতদারটি একলাফে
তিনটে করে সিঁড়ি
ডিঙ্গিয়ে উঠে আসতে দেখল।
অভিমানক্ষুব্ধ
গলায় চেঁচিয়ে উঠলো
সারাহ—কেন তুমি
চিঠি লেখনি? কেনে?
কেন?
ওয়াল্টার
ফ্র্যাংকলিন-এরও জবাব
তৈরী,
নিউইয়র্ক তো ছোটখাট
জায়গা নয় যে
ডাক দিলেই তোমায়
খুঁজে পাবো। গত বৃহস্পতিবার
নিউইয়র্কে এসে জানলাম
তুমি সে বাসা
ছেড়ে দিয়েছ, তোমার
এখনকার ঠিকানা বাড়ীওয়ালা
জানে না। তারপর
থেকে খড়ের গাদায়
ছুঁচ খোজার মতই
খুঁজেছি তোমাকে।
--কিন্তু আমি
যে চিঠি দিয়েছিলাম?
-বিশ্বাস করো,
সে চিঠি আমি
পাইনি।
-তাহলে আমাকে
খুজে বের করলে
কিভাবে?
জোতদার
ছেলেটি এবার একটি
ঠিক বসন্তকালীন হাসি
উপহার দিল।
---সে ভারি
মজার ব্যাপার। বছরের
এ সময়টায় কিছু
কাঁচা তরকারি খেতে
আমার ভাল লাগে।
আজ সন্ধ্যায় সেই
খোজ করতে করতেই
এসে পৌছলাম তোমার
বাড়ীর পাশের ঐ
হোম রেষ্টুরেন্টে---
-তারপব?
রুদ্ধ নিঃশ্বাসে বলে
সারাহ।
-তারপর খাদ্য তালিকায়
চোখ বুলাতে বাঁধাকপি
পর্যন্ত এসেই আমার
চক্ষু স্থির।
--আরে হ্যা।
চেঁচিয়ে উঠলো সাবা।
ঐ বাঁধাকপির পবেই
তো ছিল ড্যাণ্ডেলিয়ন
ফুল দিয়ে তৈরী
খাবারটার নাম। কিন্তু
ওয়াল্টার, তুমি কি
করে--
---তক্ষুনি
লাফ দিয়ে উঠলাম।
চেয়ারটা গেল উল্টে।
হাক ডাক করে
দোকানের মালিককে ডাকলাম,
সেই তো দিল
তোমার ঠিকানাটা।
--কিচ্ছু বুঝতে
পারছি না ওয়াল্টার।
তুমি কি করে
বুঝলে আমার ঠিকানা
ও জানাবে?
–আরে বাবা।
তোমাকে তো জানি।
তোমার টাইপরাইটারের ঐ
অদ্ভুত বড় হাতের
ডব্লিউটা কি না
চিনতে পারার?
-কিন্তু, কিন্তু
ওয়াল্টার, ডব্লিউ কেন?
ডব্লিউ? ড্যাণ্ডেলিয়ন বানানে
তো ডব্লিউ নেই।
একগাল
হেসে ওয়াল্টার পকেট
থেকে খাদ্যতালিকাটি বার
করে একজায়গায় আঙ্গুল
দিয়ে দেখালো।।
সেই
বেদনাবিধুর বিকালে টাইপ
করা প্রথম মেনুকার্ডটির
ওপর এককোনে অস্পষ্ট
চোখের জলের ছাপ।
আর যেখানে একটি
বনফুলের নাম লেখা
উচিত ছিল,
সারাহর অবাধ্য আঙুল
সারাহর অজান্তে বাঁধাকপি
আর মশলাভরা কাচালংকার
মাঝে লিখেছে
প্রিয়তম
ওয়াল্টার, সঙ্গে পুরো
সিদ্ধ ডিম।
এডিটঃ
মারুফ আল মাহমুদ
- - - - - - - - - - - শেষ - - - - - - - - - - - - -
এডিটঃ
মারুফ আল মাহমুদ
- - - - - - - - - - - শেষ - - - - - - - - - - - - -
“আজ তোমাদের (মুমিনদের) জন্য সমস্ত পাক-পবিত্র বস্তু হালাল দেয়া
হয়েছে। আহ্লি কিতাবদের খাদ্য তোমাদের জন্য হালাল এবং তোমাদের খাদ্য তাদের জন্য হালাল। আর
সংরক্ষিত মেয়েরা তোমাদের জন্য হালাল, তারা ঈমানদারদের দল থেকে হোক বা এমন জাতিদের মধ্য থেকে হোক, যাদেরকে তোমাদের আগে কিতাব দেয়া হয়েছিল। তবে শর্ত হচ্ছে এই যে, তোমরা তাদের মোহরানা আদায় করে দিয়ে বিবাহ বন্ধনের মাধ্যমে তাদের রক্ষক হবে। তোমরা
অবাধ যৌনচারে লিপ্ত হতে পারবে না অথবা লুকিয়ে লুকিয়ে প্রেম করতেও পারবে না। আর যে
ব্যক্তি ঈমানের পথে চলতে অস্বীকার করবে, তার জীবনের সকল সৎ কার্যক্রম নষ্ট হয়ে যাবে এবং আখেরাতে সে হবে নিঃস্ব ও
দেউলিয়া।” (আল কুরআন - সুরা আল মায়েদাহঃ ৫)
No comments:
Post a Comment